যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, কূটনীতিকদের কঠিন পরীক্ষা

 





 

বিদেশি কূটনৈতিক চাপের বিপরীতে পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে বাংলাদেশের মতো দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি থাকতে হয় ইস্পাত কঠিন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় সেই শক্তি দেখাতে পেরেছিলো বাংলাদেশ সরকার। জন কেরির মতো আমেরিকান বুরোক্রাটিক ব্যক্তির ফোনকল একরকম গ্রাহ্যই করেনি বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক ভিত মজবুত থাকায় সেজন্য কোন ঝক্কিও পোহাতে হয়নি সরকারকে।


গত দুইটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশ 'কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্রের' দিকে ধাবিত হয়েছে, সেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা বিলীন হয়ে গেছে। আর গণতান্ত্রিক ভিত হয়েছে নড়বড়ে।

২০০৯ এর সরকার যেখানে শুরু থেকেই মিলিটেন্সি ঠেকাতে সব জায়গায় রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। সেখানে ২০১৪ ও ২০১৮র সরকার 'কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র' কায়েম করতে গিয়ে উল্টোদিকে হেঁটেছে। বেড়েছে সংস্থার কর্তৃত্ব। কমেছে রাজনৈতিক তথা গণতান্ত্রিক ক্ষমতা।

যার ফলাফল এই বুরোক্রাটিক সংস্থার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হতে হয়েছে সরকারকে। একরকমভাবে সরকারের ভিত মজবুত করেই রেখেছে এই মিলিটেন্সি শক্তিগুলো। আর এমন একটি পরিস্থিতিতে সংস্থা ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা!


গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কূটনীতিক স্তর উন্নীত হওয়ায় বেশিরভাগ বিশ্লেষকের লেখায় উঠে আসতো 'বাংলাদেশের দিকে নজর সরিয়েছে আমেরিকা' কিংবা 'ভারতের চোখে বাংলাদেশ দেখছে আমেরিকা'। এই সময়েই চীন, রাশিয়া, ফ্রান্সের সঙ্গে নানা আঙ্গিকে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের। তৈরি হয়েছিলো একটি ভারসাম্যের কূটনীতি। যেখানে সকল দেশের সঙ্গে প্রায় সমতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছিলো বাংলাদেশ সরকার। সেখানে হয়তো চীনের সঙ্গে কিছুটা বেশিই অন্তরঙ্গতা বেড়ে গিয়েছিলো সরকারের! ওয়াশিংটনের পথ ধরে চীন বিরোধী কোয়াড জোট থেকে গা বাঁচিয়ে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। আর সেখানেই বড় আঘাত করলো আমেরিকা?


এই পরিস্থিতিতে ভীষণ চাপে মিলিট্যান্সি সংস্থা। আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের ভূমিকা খারাপভাবে প্রকাশিত হওয়ায় স্বাভাবিকতই তারা মুখ ফেরাবে সরকারের দিকে! সরকারের দাঁড়ানোর জায়গা ছিলো গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্রের সঙ্গে সরকারের যোজন দূরত্ব! সেই দূরত্বের সুযোগ নিতে পারে যেকোনো সুযোগ সন্ধানীই! ভয়টা মূলত সেখানেই।


এখন মূলত কাজ কূটনীতিকদের। তারা মেরুদণ্ডটা ঠিক কতোটা শক্ত রেখে বিষয়টা সামাল দিতে পারবেন সেখানেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের রাজনীতি। আর সরকারের কাছে পথ হলো সঠিক গণতান্ত্রিক চর্চা।

Comments